
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমানে প্রস্তুতির শেষ ধাপে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন মূলত সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ হলেই ভোটের জন্য তাদের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এরপর সরকারের তরফে দিনক্ষণের ঘোষণা এলে শুরু হবে ইসির ভোটযজ্ঞ।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব বিষয় সর্বাগ্রে প্রয়োজন, সেগুলো হচ্ছে- একটি হালনাগাদ নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে হালনাগাদ ভোটার তালিকা সম্পন্ন করা, যা প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে ইসি। ধারণা করা হচ্ছে, আসছে জুনের মধ্যেই প্রস্তুতির সব ধাপ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এরপর সরকার যখন চাইবে, তখনই নির্বাচন আয়োজন করতে মাঠে নামবে ইসি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এরই মধ্যে ধারণা দিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচন কমিশনও সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডিসেম্বরে ভোটের আয়োজন করা হলে অক্টোবরেই তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।
সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা না করায় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকালও বলেছেন- যত দিন যাচ্ছে, আমাদের মনে হচ্ছে, গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ যেন আরও দীর্ঘায়িত করা যায়, সেজন্য কিছু কূটকৌশল প্রণয়ন করা হচ্ছে। সেটা থেকে আমরা যেন বিরত থাকি, সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেই আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন গতকাল বলেছেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে, ভোট সন্ত্রাস করে আপাতদৃষ্টে জেতা যায়। কিন্তু আখেরে দেশের জন্য, দলের জন্য ভালো হয় না। তাই নির্বাচনে জয়ী হতে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভোট সন্ত্রাসের চেষ্টা না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে গতকাল নির্বাচন কমিশন আয়োজিত আলোচনা সভায় সিইসি আরও বলেন, মানুষ এত দিন ভোট দিতে পারেনি। এখন ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ এসেছে।
সভায় নির্বাচন কমিশনার বেগম তামিদা আহমদ বলেন, খোলা মাঠে ব্যালট বাক্স স্থাপন করে ভোট আয়োজন করার প্রস্তাব দিলাম। যদিও এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমি বিশ্বাস করি, এটি ভোটের স্বচ্ছতা প্রমাণে সহায়ক হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আগে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অব.) বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিগত দিনে বিভিন্ন কারণে অনেকে ভোটার হতে পারেননি। অথবা কেউ কেউ অনীহার কারণে ভোটার হননি। ভঙ্গুর নির্বাচনী পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র উত্তরণের বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভোটের প্রতি অনেকের আগ্রহ বেড়েছে। তাই ৩০ জুনের মধ্যে আরেক দফা নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, এবারের ভোটার দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যাতে করে কেউ অস্বচ্ছ বা ভুয়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন না করতে পারে। তিনি আরও বলেন, রাতের ভোট দেখতে চায় না কমিশন।
অনুষ্ঠানে পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ১৩ জনের হাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেন সিইসি। এর আগে ভোটার দিবস উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ২ মার্চ দেশে মোট ভোটার ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। ওই বছরের শেষে যোগ হয় আরও ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ ভোটার। এ ছাড়া রিভাইজিং অথরিটির যাচাই-বাছাইয়ে যোগ হয় আরও ৪৮ হাজার ৭৬২ জন। সবমিলিয়ে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৬১৫ জন পুরুষ। নারী ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৫ জন এবং হিজড়ার সংখ্যা ৯৯৪। প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় ভোটার দিবসে হালনাগাদ এই ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে ভোটার বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২০ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষের তথ্য। নতুনদের যুক্ত করার পাশাপাশি মৃতদের বাদ দিয়ে আগামী জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা নির্ধারিত হবে।